Monday, September 20, 2010

বীণা

0 comments
 বীণা অতি প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির এক সূরযন্ত্র। ধারনা করা হয় প্রাচীন বেদিক সভ্যতার সময়ে শিকারীর ধনুকের আওয়াজ থেকে এই যন্ত্রটির আবিস্কার করে তখনকার সময়ের পুংটারা নামে পরিচিত ছিল। এটা খ্রীষ্টপূর্ব প্রায় ১৫শ বছর আগের বলে কেউ কেউ মনে করেন :- কালের পরিক্রমায় বিবর্তিত হতে থাকে এটির গঠনশৈলি ও নাম। কখনো তান্জাভুর বা রাঘুনাথা বীণা, কিন্নরী বীণা, রূদ্র বীণা, স্বরসতী বীণা ইত্যাদি। আবার কখনোবা বিচিত্র বীণা বা মোহন বীনা। উল্লেখ্য যে সংগীতের অন্যতম আদিগুরু তানসেনের প্রিয় যন্ত্র নাকি ছিল রূদ্র বীণা। আর হিন্দুদেবী স্বরসতীর নামেই তো বীণার নামকরন হয়ে গেছে। এটির আধুনিক সংস্করণ- মোহন বীণা দেখতে ও শুনতে অনেকটা বর্তমানের হাওয়াইন গীটারের মতো।
যা হোক যন্ত্র হিসাবে বর্তমান যুগে ততোটা আদরনীয় না হলেও এটি অত্যান্ত কুলীন একটি বাদ্যযন্ত্র এবং শাষ্ত্রীয় ও ধ্রুপদী সংগীতে এটি যথেষ্ট মর্যাদার সাথেই, বিশেষ করে দক্ষিন ভারতীয় সংগীতে এখোনো ব্যবহ্রত হয়।
 লিখেছেন : হাসান মনজুর

Friday, August 27, 2010

মৃদঙ্গ

0 comments
এটা প্রাচীন আনদ্ধ জাতীয় লোকবাদ্য। প্রাচীনকালে যেসব তালযন্ত্রের প্রচলন ছিল, তার মধ্যে আঘাতজনিত বাদ্যযন্ত্র হিসেবে মৃদঙ্গ তত্ত্বীয়ভাবে পরিচিত। মৃদঙ্গ অর্থ_ মৃত্তিকা নির্মিত অঙ্গ বা মৃৎ+অঙ্গ= মৃদঙ্গ। আগে মাটি দিয়েই এটা তৈরি হতো। তবে এখন তা তৈরি হয় কাঠ দিয়ে। লম্বা আড়াই ফুট। বাঁদিক আয়তনে ডানদিকের চেয়ে দ্বিগুণ। নলাকৃতি দেহের দুই পাশে চামড়ার ছাউনির আচ্ছাদন থাকে। কেবল ডানের ছাউনিতেই তবলায় ব্যবহৃত কালো চোখের মতো ক্ষীর বসানো হয়। বাজানোর সময় আটার তাপ্পি লাগিয়ে মৃদঙ্গ থেকে গুরুগম্ভীর আওয়াজ বের করা হয়। দুই মুখের চামড়ার চাক চামড়া দিয়ে টানা দেওয়া থাকে।

ডুগডুগি

0 comments
আনদ্ধ বাদ্যযন্ত্র। লোকবাদ্য। গ্রামীণ সংস্কৃতিতে এর আবেদন রয়েছে। নির্মাণ উপাদান সহজলভ্য। একখণ্ড কাঠের মাঝখানে চাপা এবং দুই প্রান্ত একটু স্ফীত ফাঁপা থাকে। নিচের অংশ সরু দুইটি ছোটো আকারের পাটি বিপরীত মুখে একত্র করলে যেমন দেখায়, কাঠের টুকরার অবয়ব সেরকম। দুই প্রান্ত চামড়া দিয়ে ছাওয়া হয় এবং খোলের মাঝখানে এক খণ্ড সুতা বেঁধে তাতে এক টুকরা সিসা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এক হাতে খোলের মাঝখানে ধরে নাড়া দিলেই সুতায় ঝোলানো সিসার গুলি চামড়ার ঢাকা অংশে আঘাত করে। ফলে এক ধরনের শব্দ সৃষ্টি হয়। এই ধ্বনির সুললিত্ব-তাল-মদক-লয় ঠিক রাখার জন্য বাদকের হাত নাড়ানোর কৌশল জানা থাকতে হয়।
ডমরু বাদ্যযন্ত্রটি যারা বানর বা সাপের খেলা দেখায়, তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ডমরু ডুগডুগি নামেও পরিচিত।

শঙ্খ

0 comments
প্রাচীন শুষির শ্রেণীর বাদ্যযন্ত্র শঙ্খ। লোকবাদ্য এবং সেই সঙ্গে শঙ্খের অলঙ্কার নিয়ে লোকশিল্প হিসেবে বাংলা এবং ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে সমাজ-সংস্কৃতির সঙ্গে শঙ্খের গভীর সম্পর্ক ছিল, যার প্রমাণ পাওয়া যায় প্রাচীন গ্রন্থ, শিল্প, সাহিত্য, ভাস্কর্য ও চিত্র থেকে।
মৃত শঙ্খের খোলসই শঙ্খবাদ্য। শঙ্খের নাভির কাছে ছিদ্র করে ফুঁ দিয়ে বাজাতে হয়। এক ধরনের সামুদ্রিক ঝিনুকের খোলস থেকে এ বাদ্যযন্ত্রটির উৎপত্তি। এ ঝিনুকের মুখটি বাঁকা ছিদ্রবিশিষ্ট। ভেতরের ছিদ্রপথও বাঁকা। মুখ দিয়ে ফুঁ দিলেই মিষ্টি-মধুর শব্দ হয়। ঠোঁট দিয়ে জোরে চেপে ফুঁ দিতে হয়। সাধারণত এই ঝিনুকের রং সাদা এবং কিছুটা বাদামি। অনেকে একে কম্বু ও শাঁখ বলে।
তিন দিনব্যাপী এই মেলা দেখতে আসে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ। অনেকেই সন্তানদের মেলায় নিয়ে আসে গ্রামীণ এই বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে। উদ্বোধনী ও সমাপনী দিনে সঙ্গিতানুষ্ঠান ছিল প্রাণকাড়া। তবে অনেকের মতে এটাকে মেলা না বলে প্রদর্শনী বললে হয়তো আরো ভালো হতো।

সারিন্দা

0 comments
ততযন্ত্র। বাংলাদেশের গ্রামীণ লোকসমাজে সারিন্দা জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র। লম্বায় প্রায় দুই ফুট। আস্ত এক কাষ্ঠখণ্ডকে কেটে এবং নিম্নভাগে খোদাই করে বাদ্যটির ধ্বনিকুম্ভ তৈরি হয়। কিন্তু দোতারা প্রভৃতি বাদ্যের সম্পূর্ণ খোলা অংশে চামড়ার ছাউনি লাগানো হয় না; বরং এর সরু অংশই ক্ষুদ্রাকারে চামড়ার ছাউনি যুক্ত করা হয়।
ছাউনির ওপর সওয়ারি সংস্থাপন করা হয়। এর মাথাটি বেশ কারুকার্যখচিত। জীবজন্তু বা পাখির আকৃতি খোদাই করা। সাধারণত তিনটি তার থাকে এতে। মাথার কারুকার্যখচিত অংশে তিনটি কাঠের বয়লা বা কান লাগানো থাকে। বয়লা থেকে তিনটি তার সওয়ারির ওপর দিয়ে সারিন্দার শেষ প্রান্তে আবদ্ধ অংশটায় আটকানো থাকে। এর তারগুলো চামড়ার। কান ঘুরিয়ে প্রয়োজন মতো তার বা তাঁতকে চড়ানো বা নামানো যায়। এতে কোনো পর্দা থাকে না।
সারিন্দা ছড়ের সাহায্যে বাজাতে হয়। ছড়টি দেখতে অনেকটা ধনুকের মতো। ছড়ে ঘোড়ার লেজের চুল ব্যবহার করা হয়। পটরির ওপর বাঁ হাতের আঙুল দিয়ে তার টিপে ডান হাতে ছড় টেনে সারিন্দা বাজানোর নিয়ম। ঢাকা এবং ঢাকার নরসিংদী অঞ্চলের সারিন্দা উল্লেখযোগ্য।

মুরলী

0 comments
যে বাঁশির ওপর গাঁট বন্ধ থাকে, মুখরন্ধ্র যা আঁড়ভাবে ধরে ঠোঁট খানিকটা বাঁকিয়ে ফুঁ দিয়ে বাজাতে হয়, তার নাম আঁড়বাঁশি। একে অনেক জায়গায় মুরলীও বলা হয়। আঁড়বাঁশিতে ফুঁ দেওয়ার ছিদ্রটি বাঁশির শেষ প্রান্তে না করে প্রায় দুই ইঞ্চি ভেতরে বাঁশির গায়ে করা হয়। বাজানোর সময় এই ছিদ্রটি দুই ঠোঁটের কাছে নিয়ে ফুঁ দিতে হয়। এই বাঁশিতে স্বরস্থানে ছয়টি ছিদ্র থাকে। এটা খাড়া করে ধরা হয় না। অনেকটা মাটির সঙ্গে সমান্তরাল করে মুখ ও দেহের ডানদিকে প্রসারিত করে পাশাপাশি ধরে বাজানো হয়।

Thursday, March 11, 2010

ইয়্যু ছিং

1 comments
চীনে ইয়্যু ছিং বেহালা এক ধরনের ব্যাপক জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র । ইয়্যু ছিং বেহালা দিয়ে সুন্দর সংগীতের সুর বাজানো যায় এবং এতে মানুষের আনন্দপূর্ণ অনুভূতি ও পরিবেশের অফুরন্ত সৌন্দর্য ফুটে উঠে ।
ইয়্যুন ছিং বেহালা এমন এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র , যে বাদ্যযন্ত্র চীনের হান জাতি এবং দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ই জাতি , মিয়াও জাতি , তুং জাতি ও পাই জাতিসহ বিভিন্ন সংখ্যালঘু জাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে খুব জনপ্রিয় রয়েছে । এক হাজার বছরেরও বেশি পুরানো ইয়্যু ছিং বাদ্যযন্ত্রের উদ্ভব হয় ৬১৮ থেকে ৯০৭ খ্রীষ্টাব্দে চীনের থাং রাজবংশের আমলে । সংগীতের সুর বাজানোর জন্য ইয়্যু ছিং বেহালায় যে তার ব্যবহার করা হয় , তা রেশম , রাসায়নিক তন্তু ও ধাতুর সূত্রে বিভক্ত করা হয় । এর মধ্যে রাসায়নিক তন্তু ও ধাতুর তার ভালো । এ দুটো সূত্র ব্যবহার করলে সংগীতের সুর আরো সুন্দর ও নরম হবে ।
ইয়্যু ছিং বেহালা দিয়ে বাজানো 'জল ছিটানো উত্সব' নামে লোক সংগীতে সংখ্যালঘু জাতি-তাই জাতির আচার ব্যবহার বিষয়ক সুর প্রকাশ পেয়েছে । এতে চীনের দক্ষিণ পশ্চিমাংশের তাই জাতি অধ্যুষিত এলাকায় জল ছিটানো উত্সবের ঐতিহ্য ও মানুষের উত্সব উদযাপনের মেতে উঠার উত্সাহব্যঞ্জক আবেগ দেখা যায় ।
চীনের বিভিন্ন অঞ্চলের আঞ্চলিক অপেরার সঙ্গে ইয়্যু ছিং বাদ্যযন্ত্রের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ । যেমন, পাই জাতির লোকেরা পাই অপেরা পরিবেশনের সময় সাধারনতঃ ইয়্যু ছিং বেহালা ব্যবহার করে থাকে । দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিছুয়াং প্রদেশের আঞ্চলিক সিছুয়াং অপেরা পরিবেশনের সময়ও ইয়্যু ছিং বেহালাকে প্রধান বাদ্যযন্ত্র হিসেবে বাজানো হয় ।
চীনের বেশ কিছু সংখ্যালঘু জাতির মধ্যে ইয়্যু ছিং বেহালাকে এক ধরনের খুব জনপ্রিয় বাদ্যযন্ত্র বলে ধারণা করা হয় । তুং জাতির লোকেরা সংগীতের সুর বাজানোর সময় সাধারণতঃ লুসেন নামের বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে ইয়্যু ছিং বেহালাও ব্যবহার করে থাকে । পাই জাতির লোকজন ইয়্যু ছিং বেহালাকে এ জাতির সান স্যুয়ান নামের প্রিয় বাদ্যযন্ত্র হিসেবে দেখেন । ই জাতির মানুষ ইয়্যু ছিং বেহালাকে ভীষণ ভালবাসেন । তারা ঐতিহ্যবাহী ইয়্যু ছিং বেহালার ভিত্তিতে স্বজাতির বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন নতুন ধরনের ইয়্যু ছিং তৈরি করেছেন । মিয়াও জাতির লোকেরা উত্সব বা বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিবেশ আরো আড়ম্বরপূর্ণ ও বৈচিত্র্যময় করে দোয়ার জন্য নরনারীরা সবাই ইয়্যু ছিং বেহালা বাজায় । এতে প্রিয় জনেরা পরস্পরের সঙ্গে ভালবাসা ও প্রেমের অনুভূতি বিনিময় করে থাকেন । এখন এটা মিয়াও জাতির এক ধরনের ঐতিহ্য ও রীতি-নীতিতে পরিণত হয়েছে । (থান ইয়াও খাং)